শাহেদ মিজান, কক্সবাজার :::
মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক পুঁইছড়ার বাসিন্দার নূরুল আলম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছড়ায় তার কর্মস্থল। আয়ের সাথে ব্যয়ের সঙ্গতি না মেলায় পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে রাখেন তিনি। নিজে ব্যাচেলর থাকেন। তবে পরিবারের টানে সপ্তাহে এক বা দু’দিন গ্রামের বাড়িতে যান নূরুল আলম। এভাবে চলছে প্রায় ১০ বছরের চাকরিজীবন।
নূরুল আলম বলেন, ‘সপ্তাহের কর্মদিন শেষে প্রতি বৃহস্পতিবার বিকালে আমি বাড়ি ফিরি। এতে শুরু থেকেই দেখে আসছি বিকাল থেকে ভাটা হয়। কক্সবাজার ঘাট ও মহেশখালী ঘাট; দু’দিকেই ভাটা হলে বোট ঘাটে ভিড়তে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চলে আসছে। তবে দিন যতই যাচ্ছে এই সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। এর মধ্যে মহেশখালী জেটিঘাটের দুর্ভোগ সীমাহীন। বিগত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এই ঘাটে দুর্ভোগ অত্যন্ত প্রকট হয়েছে। বর্তমানে এই সমস্যাটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে আর সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘মহেশখালী জেটির দুর্ভোগের কারণে এখন ঠিক মতো যাওয়া হচ্ছে না। প্রতি সপ্তাহে তো দূরের কথা এখন মাসেই বাড়ি যেতে ভয় পাই।’
গত সপ্তাহের কথা। মহেশখালী ঘুরে কক্সবাজার ফিরছিলেন ময়মনসিংহ থেকে আসা এক দম্পতি। বাচ্চা রয়েছে দু’টি। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই পোষাকসহ কাদায় মাখা! চোখে-মুখে দুর্ভোগ, তিক্ততা আর ক্ষোভের ছাপ ফেটে পড়ছে! ওই দম্পতি খুব ক্ষোভের স্বরে জানিয়েছেন, তারা আর কখনো মহেশখালী ভ্রমণে না আসার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
এই দম্পতির মতো অনেক পর্যটক প্রতিদিন এভাবে ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে মহেশখালী থেকে ফিরছেন। একই সাথে আর কখনো মহেশখালী না আসার প্রতিজ্ঞা করে যাচ্ছেন। উপরের এই দু’টি ঘটনার পুনরাবৃত্তি এখন মহেশখালী জেটিঘাটে নিত্য ঘটছে।
অন্যদিকে মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন, মহেশখালী কলেজ, মহেশখালী বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ, মহেশখালী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মজীবি প্রতিদিন কক্সবাজার থেকে গিয়ে কাজ করছেন। উপরের দু’টি ঘটনার চেয়ে এই সব মানুষগুলো দুর্ভোগ কত তা ‘বর্ণনার দিন শেষ হয়ে গেছে’।
জানা গেছে, দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর প্রায় চার লাখ মানুষ মহেশখালী জেটিঘাট নিয়ে ১০ বছরের বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় নৌ যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে দুর্ভোগের শিকার যাত্রীদের নানা অভিযোগের পরও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছর এ জেটি থেকে ৩০/৪০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও জেটি সম্প্রসারণে কর্তৃপক্ষের মাথাব্যাথা নেই।
মহেশখালী জেটি ঘাটে নৌযান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত আবুল কালাম জানান, ভাটা শুরু হলেই নেমে আসে দুর্ভোগ। ভাটা শুরুর পর অল্প সময়ের জন্য ডিঙি নৌকা দিয়ে জেটিতে যাত্রী পারাপার করা যায়। ভাটা পূর্ণ জেটি থেকে অন্তত ২০০ গজ দূরে আটকে পড়ে সব ধরনের নৌযান। এসময় কোনও নৌযানই ঘাটে ভিড়তে পারে না। এমনকি বিকল্প বাহন ডিঙি নৌকাও চলাচল করতে পারছে না। প্রতিদিন প্রায় ৫ ঘণ্টা এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
যাত্রীরা জানান, ভাটার সময় নিরুপায় হয়ে কোমর সমান কাদা আর হাঁটু সমান পানি ভেঙে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে পুরুষ যাত্রীরা কোনওভাবে চলাচল করতে পারলেও নারী, শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীদের চরম কষ্ট হচ্ছে। রোগীদেও ক্ষেত্রে কষ্টটা বর্ণনাতীত। এই কারণে মহেশখালীবাসীর এখন একটাই প্রশ্ন- আর কতো দুর্ভোগ সইতে হবে।
প্রভাষক মাহবুবুর রহমান বলেন ‘ঘাটের কারণে এখন সময় মেপে চলাচল করতে হচ্ছে। ভাটা হলেই আর রক্ষা নেই। গত পাঁচ বছর ধরে এই দুরাবস্থা চলে আসছে। এতে স্থানীয়দের পাশপাশি পর্যটকরাও ভোগান্তি শিকার হচ্ছেন। জেটি ঘাটের সম্প্রসারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
মহেশখালী আদিনাথ মন্দির সংস্কার কমিটির সভাপতি শান্তি লাল নন্দী বলেন, ‘আদিনাথ মন্দির দর্শন ও পূজা দেয়াসহ রাখাইন মন্দির দর্শনে দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন মানুষ আসছে। জেটিঘাটের কারণে তারা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এটা একজন পর্যটকের জন্য একটি মারাত্মক তিক্ত অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা ফিরে যাচ্ছে। এটা আমাদের পর্যটনের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল কামাল বলেন,‘জেটি সম্প্রাসরণ করার কোনও প্রকল্প আপাতত হাতে নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন,‘মহেশখালী জেটি ঘাটের ভোগান্তি আমার জানা আছে। জেটিঘাট সম্প্রসারণ করে মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথ নির্বিঘœ করার চেষ্টা করব।’
প্রকাশ:
২০১৭-০৩-২৫ ১৩:৪৪:২৩
আপডেট:২০১৭-০৩-২৫ ১৩:৪৪:২৩
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে সাঈদী
- রামুতে পাহাড়ি ছড়ায় গোসল করতে গিয়ে ২ শিশুর মৃত্যু
- চকরিয়ায় ধান ক্ষেত থেকে লম্বা অজগর সাপ উদ্ধার, পরে অবমুক্ত
- পেকুয়ায় চেয়ারম্যান পদে চমক দেখাতে পারে নারী প্রার্থী রুমানা আক্তার, গণসংযোগে গণজোয়ার
- চকরিয়ায় শাখাখালের তীর থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ১১৪ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ১০৩ জন ভোটা
- রামুতে গাড়িযোগে পাচারকালে ২০ হাজার ইয়াবাসহ ২ যুবক আটক
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: লড়াই চলছে শেয়ানে শেয়ানে
- চকরিয়া-পেকুয়ায় দুই লবণ চাষী নিহত, উড়ে গেছে বসতঘর
- চকরিয়ায় চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ
- চকরিয়ায় প্রভাবশালীর কাছে জিম্মি অসহায় পরিবার
- পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কে কোন প্রতীক বরাদ্দ পেলেন
- চকরিয়ায় প্রভাবশালীর কাছে জিম্মি অসহায় পরিবার
- চকরিয়ায় চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ
- চকরিয়া-পেকুয়ায় দুই লবণ চাষী নিহত, উড়ে গেছে বসতঘর
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: লড়াই চলছে শেয়ানে শেয়ানে
- চকরিয়ায় শাখাখালের তীর থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
- পেকুয়ায় চেয়ারম্যান পদে চমক দেখাতে পারে নারী প্রার্থী রুমানা আক্তার, গণসংযোগে গণজোয়ার
- রামুতে গাড়িযোগে পাচারকালে ২০ হাজার ইয়াবাসহ ২ যুবক আটক
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ১১৪ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ১০৩ জন ভোটা
- চকরিয়ায় ধান ক্ষেত থেকে লম্বা অজগর সাপ উদ্ধার, পরে অবমুক্ত
- রামুতে পাহাড়ি ছড়ায় গোসল করতে গিয়ে ২ শিশুর মৃত্যু
পাঠকের মতামত: